ঘণ্টায় ছড়ায় ৪ টন মিথেন, প্রায় দুই লাখ গাড়ির দূষণের সমান
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের রহস্যময় ধোঁয়া শনাক্ত করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা। মিথেন গ্যাসের অন্যতম প্রধান হটস্পট হয়ে উঠেছে রাজধানীর মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল। সেখান থেকে প্রতি ঘণ্টায় চার হাজার কেজি মিথেন নির্গত হচ্ছে বলে বিশ্বখ্যাত ব্লুমবার্গ নিউজে গত ২৫ এপ্রিল একটা খবর প্রকাশিত হয় জিএইচজিস্যাট ইনক-এর বরাত দিয়ে।ব্লুমবার্গ নিউজে উল্লেখ করা হয়, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কোনো এক অংশ থেকে পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে ক্ষতিকর ভূমিকা রাখা গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলোর একটা, মিথেন গ্যাসের একটা বিশাল নিঃসরণ চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ ঢাকার কোনো এক অংশ থেকে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে বাংলাদেশকে এই মুহূর্তে মিথেন গ্যাসের অন্যতম প্রধান কন্ট্রিবিউটর বানিয়ে দিয়েছে। মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল থেকেই দেশের আকাশে মিথেন গ্যাস! মিথেন একটি গ্রিনহাউস গ্যাস, বর্ণহীন, গন্ধহীন এই গ্যাসটি কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় প্রায় ৮৪ গুণ বেশি মাত্রায় বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। আর এই ভয়াবহ গ্যাস নিঃসরণের হটস্পট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বিজ্ঞানী ও সরকারি কর্মকর্তারা তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী গ্যাসগুলোর নিঃসরণরোধে দ্রুত এবং সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়ের সন্ধান করছেন। মন্ট্রিল-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিএইচজিস্যাটের প্রেসিডেন্ট স্টিফেন জার্মেইন জানিয়েছেন, গত ১৭ এপ্রিল তাদের হুগো স্যাটেলাইটে দেখা গেছে বাংলাদেশের মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল থেকে বিপুল পরিমাণ মিথেন নিঃসরণ হচ্ছে। তাদের ধারণা, এর পরিমাণ হতে পারে ঘণ্টায় প্রায় চার হাজার কেজি। বলা হচ্ছে, প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ ৯০ হাজার গাড়ি যে পরিমাণ বায়ুদূষণ ঘটায়, তার সমান দূষণ ছড়াচ্ছে মাতুয়াইলের বিশাল এই ময়লার ভাগাড় থেকে। মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল থেকেই দেশের আকাশে মিথেন গ্যাস! মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার টন বর্জ্য ফেলা হয়। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া ব্লুমবার্গকে জানান, ১৮১ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার টন বর্জ্য ফেলা হয়। তরল বর্জ্য ও গ্রিনহাউস গ্যাস ব্যবস্থাপনায় এটি জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থ সাহায্য পেয়েছে। তবে সেখানে ঠিক কী পরিমাণ মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। চলতি বছর বিশ্বের মধ্যে মিথেন নিঃসরণের অন্যতম হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ। প্যারিস-ভিত্তিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কায়রস এসএস চলতি মাসের শুরুর দিকে জানিয়েছিল, বিশ্বের শীর্ষ ১২টি মিথেন নিঃসরণের হার শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশের আকাশে। মিথেন গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান ডেডলিয়েস্ট গ্যাস, যা কি-না গত দুই দশকে কার্বন ডাই অক্সাইড (যেটাকে উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়) এর চেয়েও ৮৪ গুণ বেশি ক্ষতি করেছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের। এই ঘ্রাণহীন বর্ণহীন গ্যাস সূর্যের যে তাপ পৃথিবীতে আসছে, সেটাকে পৃথিবীতেই ধরে রাখতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণে এবং খুব দ্রুত। ফলে বাড়তি তাপমাত্রা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে, আমাদের মতো সমুদ্রতীরবর্তী দেশের জন্য যা অনিবার্য অভিশাপ। ক্লাইমেট চেঞ্জের ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর মাধ্যমে এভাবেই আমাদের সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ ঝুঁকিতে আছে।
Leave a Reply